নজরুল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া (পর্ব ২)।। মোঃ জেহাদ উদ্দিন
- মো জেহাদ উদ্দিন
- Oct 1, 2021
- 0 min read
(পূর্বে প্রকাশের পর)
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অনেক কবিতা ও গানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক ভাষার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এখানে একটি গানের উদাহরণ দিচ্ছি:
আইজগ্যা হইবো মোর বিয়া কাল্কা আইমু বউ লইয়া,
থাইগ্বা তোমরা ফ্যাল-ফ্যালাইয়া বুঝ্ল্যা গোপ্লা মুকুন্দ্যা।।
তাইরে নাইরে নাইরে না, রইমু ঘরে বাইরে না
হকাল হইন্ধ্যা দুপইত্ত্যা চইল্যা যাইবো কোহান্ দ্যা।।
[আরে ও পরামানিকের পো, ক্ষুরবার লইয়া যাইতাছো কই?
আমারে বর কামান কামাইয়া দিয়া যাওছ্যান!
আইজগ্যা যে আমার বিয়া হইবো! [হ আরে আহো! আহো]
তাইরে নাইরে নাইরে না, রইমু ঘরে বাইরে না
হকাল হইন্ধ্যা দুপইত্ত্যা চইল্যা যাইবো কোহান্ দ্যা।।
[হউর হাউরী পাইমু কাল্, হুমুন্দী, আর হালার পাল
কইবো মোরে, হুনত্যাছ? ও-জামাই, কড়াকড়ির কী কাম আছে,
আর দুইডা দিন থাইক্যা যাও না ক্যা? অ্যা!]
আরে আমি উঠ্মু কি গাছত্ গিয়া, উৎকা মাইর্যা ফাল দিয়া,
ভাইরে, হালার পরান ডা, (ভাইরে) নাইচ্যা উঠ্ছে এ্যাহন্ থ্যা।
তাইরে নাইরে নাইরে না, রইমু ঘরে বাইরে না
হকাল হইন্ধ্যা দুপইত্ত্যা চইল্যা যাইবো কোহান্ দ্যা।।
[আরে ও মুখুজ্যা ভাই, মুখুজ্যা ভাই, আরে যাও কই, হুইনা যাও।
হুইনা যাও। হক্কল দিনই তো বলদ লইয়া মাঠে চরাইবার যাও।
আজকা আমারে লইয়া মাইয়ার বাড়ি যাওন লাগ্বো,
খাওন-দাওন আছে খাওন-দাওন আছে! ঠইগ্বা না, ঠইগ্বা না!]
তাইরে নাইরে নাইরে না, রইমু ঘরে বাইরে না
হকাল হইন্ধ্যা দুপইত্ত্যা চইল্যা যাইবো কোহান্ দ্যা।।
[খাইমু কি কি আরে হুনছ — গোপ্লা, ও মুকুন্দ্যা!
আরে, মুকুন্দ্যা ঐ খানে যাইয়া খারাইয়া আছত্ কিল্ল্যাইগ্যা? আহো, হুনো!
মাংস খাইমু, লুচি খাইমু, পাত্ক্ষীর খাইমু, আর দইও খাইমু। আর তোমরা
অভাগ্যা, অভাগ্যার পাল! তোমরা তো খাইবা না, তোমরা চাইটবা! চুকা কাসুন্দ্যা চাইটবা।]
ফুচ্কি দিয়া তোমরা চোর, দেখ্বার চাইবা বউরে মোর,
রাখুম তারে লুকাইয়া, হোগলার বস্তা চাপুনদ্যা।।
তাইরে নাইরে নাইরে তাই, বউরে ছাইর্যা যাইরে ভাই
থাক্তে পরান অসুম্ না, (ভাই) পইচ্যা হইমু ফাপুন্দ্যা।।
[আরে গোরা-চাঁন যে, অকালের গাড়িতে আইল্যা বুঝি?
তোমরা দুই ভাইয়েই তো কোলকাতায় আষ্ট বছর কাল
ঘরজামাই হইয়া আছো। বউর লগে ভাব ক্যামুন। চালতাছে ক্যামন? অ্যা?]
(গানের ইউটিউব লিংক: https://www.youtube.com/watch?v=125AyVCP1sc)
এখানে উল্লেখিত নজরুল সঙ্গীতটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক শব্দের প্রভাব কতখানি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরও কয়েকটি শব্দের দিকে বিশেষ নজর দেয়া যেতে পারে:
ü আইজগ্যা
ü কোহান্ দ্যা
ü কামাইয়া দিয়া যাওছ্যান
ü হউর হাউরী
ü পাইমু কাল্
ü হুমুন্দী
ü হালার পাল
ü হুনত্যাছ
ü মাইয়ার বাড়ি
ü চুকা কাসুন্দ্যা
এ শব্দগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক ভাষার। এ রকম আরও অনেক উদাহরণ আছে। আসলে নজরুল সাহিত্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক ভাষা ও সংস্কৃতির স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। এই বিষয়ে কোন গবেষণা হয়নি। হলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য উপকৃত হবে।
নজরুল সাহিত্যে যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষ্টি-সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে, ঠিক তেমনি নজরুল জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিবর্গ। সেই প্রসঙ্গে আমরা পরে যাব। এ পর্যায়ে একটি আক্ষেপের কথা বলা প্রয়োজন। আর তা হল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন পর্যন্ত কোন নজরুল স্মৃতি-স্মারক গড়ে ওঠেনি। এমন সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের একটি জেলায় কেন তা হল না তা আমাদের বোধগম্য নয়। কেউ কেউ হয় তো বলবেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নজরুল যে এসেছেন তার কোন চিহ্ন তো নেই। আমরা বলব, আমাদের অসচেতনতার কারণেই তা আমরা লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারেনি। তার চেয়েও বড় বিষয় হল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিবাসীরা তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ও ধারাবাহিকতা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সূফী জুলফিকার হায়দার, আব্দুল কাদির, মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহর জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘরে ঘরে নজরুল-ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। নজরুল-নামীয় কোন প্রতিষ্ঠানও গড়ে ওঠেনি এ জেলায়।......(চলবে)
📷 লেখক নজরুল গবেষক, সরকারের উপসচিব (প্রতিষ্ঠাতা, নজরুল স্টাডি সেন্টার ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্যানিকেতন, বেড়তলা, সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
📷 লেখকের ইউটিউব চ্যানেল: https://www.youtube.com/user/jehadtax
📷 নজরুল স্টাডি সেন্টারে যোগ দিন: https://www.facebook.com/groups/1225632124206211
Comments