ফিলিস্তিন ও জুলফিকার!
- শাহজালাল খান
- 9 hours ago
- 4 min read
ইসলামে বদর যুদ্ধ থেকে আমরা কেবল এতটুকুই শিখেছি যে, যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য আসে । এরপরের শিক্ষাগুলো আর কিছুই নিতে পারিনি । ওহুদের শিক্ষা হলো সংযমী না হলে পরাজয় অনিবার্য । নিতে কি পেরেছি ? খন্দকের শিক্ষা হলো রণকৌশলী না হলে শুধু আল্লাহর সাহায্যের প্রহর গুনলে জিততে পারবা না । শিক্ষা কি নিয়েছি ? । তাবুকের যুদ্ধের শিক্ষা হলো কখনো কখনো জেতার জন্য পিছু হটতে হয় । কালক্ষেপণ করতে হয় । সময়ের সাথে সাথে যুদ্ধাস্ত্রের যোগ্যতা অর্জন করতে হয় । কিছু কি শিখেছি ?
হজরত মুহম্মদ (সঃ) জুলফিকার নামের যে তরবারি ব্যবহার করতেন তা তিনি যুদ্ধলব্ধ ধন হিসেবে পেয়েছিলেন কুরাইশ সর্দার আস ইবনে হিশামের কাছ থেকে । এই তরবারিটি হিশাম কিনেছিলেন রোমানদের অস্ত্রবাজার থেকে । মতান্তরে ইযেমেনের অস্ত্রবাজার থেকে । এই তরবারির দ্বিফলকটি ছিল তৎকালীন অস্ত্রবাজারে দুর্বোধ্য, মারাত্মক ও অপ্রতিরোধ্য ।
মুহম্মদ (সঃ) কর্তৃক এই অস্ত্রটি উপহার প্রাপ্ত হয়ে সেটি চালনায় পরবর্তীতে হজরত আলী হয়েছিলেন সিদ্ধহস্তা অজেয় এক মহাবীর । কিন্তু আমরা শুধুই শিখেছি হজরত আলীর হাতের সাথে ফেরেস্তাদের হাত যুক্ত হয়ে যুদ্ধ করতো । মুহম্মদ (সঃ) কোন যুদ্ধে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে জয়ী হননি । খোলাফায়ে রাশিদিনের সময় মিনজানিক ( পাথর ছুড়ে মারার অস্ত্র, বর্তমান যুগের ক্ষেপণাস্ত্র ) ব্যবহার করা হতো ।
হজরত ওমর ( সেনাপতি ছিলেন আবু উবায়েদ সাকাফি ) রোমানদের সাথে জিসিরের যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলেন । এই যুদ্ধে পিছুহটা প্রায় চারহাজার মুসলিম সেনাকে নদীর সাঁকো ভেঙে পানিতে ডুবিয়ে রোমানরা হত্যা করা হয়েছিল । এই পরাজয়ের মূল কারণ ছিল আরবের ঘোড়া রোমানদের অতিকায় দাঁতাল কানওয়ালা হাতি দেখে ভয়ে দিগ্বিদিক পালিয়েছিল । খলিফা হজরত ওমর (রাঃ) এর পর হাতি নিধনবিদ্যা অর্জন করে রোমানদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন । ইসলামে দোয়া দরুদ কেবলই ভক্তি ও প্রার্থনার । কখনোই যুদ্ধাস্ত্র নয় ।
বর্তমান সাইপ্রাস মুসলমানদের করায়ত্ব আসে মূলত হজরত ওসমানের নৌবাহিনীর দ্বারা । এই নৌবহরে কিছু নৌকার র্যামে ধাতব ব্যবহার করা হয়েছিল বর্তমানে লেবাননের উপকূলে বসবাসরত রোমান কারিগরদের দ্বারা । হজরত ওসমানের যে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ছিল, যাদের সহায়তায় তিনি আর্মেনিয় যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন ।
সেই ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের মাঞ্জেনিক ছিল সেই যুগের সেরা যুদ্ধাস্ত্র । আব্বাসীয় যুগে আলকিন্দির আবিষ্কৃত আগুন নিক্ষেপক অস্ত্র দিয়ে নৌকা পুড়ানো , এসিড নিক্ষেপক অস্ত্র দিয়ে রণযুদ্ধ. পুরো মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছিল । পৃথিবীতে নিক্ষেপক যন্ত্রে যে যত পারদর্শী, যুদ্ধে জয়ী তারা হবেই । এর দ্বিতীয় সত্য আর নেই, হবেও না ।
পৃথিবীর তাবৎ বীরজাতি বর্তমানে তাই এই নিক্ষেপক বিদ্যায় নিজেদের মগজকে বিলিয়ে দিচ্ছে । আর আমরা, বর্তমান বিশ্ব মুসলিমরা কেবলই মরণের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছি । মরণকে ভয় করে আর যাই হোক যুদ্ধে জয়ী হওয়া অসম্ভব । এ কথা অনিবার্য সত্য যে, যুদ্ধে জয় কখনোই অপরের দোকানের কোকাকোলা আছড়ে ফেলে হয় না ।
কেএফসির ভিতরে ঢুঁকে খাবারের প্লেট ছুঁড়ে ফেলে হয় না । এতে শুধুই দেশের মানুষ পুঁজি হারিয়ে সর্বসান্ত হবে ।
একবার রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে একটি সাইনবোর্ড দেখলাম ,সেখানে লেখা আছে , কুরআনিক সায়িন্স মডেল মাদ্রাসা । ভিতরে যেয়ে দেখার খুব ইচ্ছা হলো । প্রতিষ্ঠানের যিনি প্রধান তার কাছে তাদের সিলেবাস ও পরবর্তী শ্রেণিগুলোর বিবরণ জানতে চেলাম খুব আগ্রহ সহকারে । কুরআনিক সায়িন্স বলতে তিনি আমাকে কুরআন পড়ার আধুনিক পদ্ধতি গুলো বর্ণনা করতে লাগলেন ।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম বিজ্ঞানের বিষয়গুলো অথবা পরবর্তী শ্রেণিতে তারা কিভাবে বিজ্ঞান শিক্ষায় প্রবেশ করবে তার কোন পরিকল্পনা আমাকে বলবেন কি ? উনি আমাকে আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে মুফাচ্ছির , মুহাদ্দিস ও ফকিহ পর্যন্ত বর্ণনা করতে লাগলেন । কুরআনিক সায়িন্স বলতে উনি এটিই বুঝেছেন ।
আমি বললাম না , আমি যেটা ভেবে আমার এক ভাগ্নিপুত্রকে আপনাদের এখানে ভর্তি করতে চেয়েছিলাম ,সেটি পেলাম না । উনি আমাকে বললেন, আপনার আশাটা কি ছিল শুনি । আমি বললাম . কুরআনের প্রথম বাণীটি ছিল পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন । আসলে আমাদের কি পড়তে বলা হলো এই কথাটিতো আলোচনায় এ জীবনে শুনলাম না । আমি ভেবেছিলাম এই বিষয়গুলো বোধহয় আপনারা নিয়ে এসেছেন ।
উনি বললেন, একটু খোলসা করুন । আমি বললাম , এর পরের আয়াতটিতে বলা হয়েছে যিনি মানুষকে আলাক থেকে সৃষ্টি করেছেন । আলাক বা তরল ঘন জীবরস , বা বীর্য, বা জোঁক সদৃশ যে বস্তুবিদ্যা , সেটি কি হিউম্যান বড়ি নয় ? ডাক্তারি বিদ্যা নয় ? এটিই তো ইসলামের পরবর্তী যুগের মানুষেরা বুঝেছিল । আমরা এখান থেকে উল্টো পথে সরে গেলাম কীভাবে ?
আর এটি যদি না হয়, তাহলে কি আমাকে বলবেন, এই অংশে আসলে কি পড়তে বলা হয়েছে ? আলকারিয়া কি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক মহাকাশ বিদ্যা নয়? নাকি শুধুই তা আরবের দরজায় ডাকহরকরা বা করাঘাতকারী ব্যক্তি । অথবা আমাদের বাংলায় ভুল অনুবাদকৃত জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড ও তাতে অন্ন্ত বসবাস ! ক্বারিয়াহ বিদ্যা না বুঝলে , আলাকের বিদ্যার বার্তাটি না জানলে যে অনন্তে নরকে বসবাস করতে হবে , এই ধ্রুব সত্যটিতো দিব্য চোখে ফিলিস্তিন , সিরিয়া , লেবাননে দেখতেই পাচ্ছি !
উনি আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করলেন না । মনে হলো উনি একজন সাধক । নতুনকে বরণ করতে পছন্দ করেন । আমাকে যথেষ্ট আপ্যায়ন করলেন । বড়হুজুরের সাথে একদিন বসার জন্য দাওয়াত দিলেন । আমি সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম । তবে সেই ভাবে আগ্রহ সহকারে নয় । কারণ ততক্ষণে আমার ভাগ্নিপুত্রকে ভর্তির আশাভঙ্গ ঘটে গেছে ।
এরপর উক্ত কুরআনিক বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর এক দাদা- নাতির কথন মনে পড়ে গেল ।
দাদা – বারো চাষে সাদা মূলা , নাতি কভু ঠিকবানা,
নাতি - বাঁচতে হলে ল্যাবে ঢোকো , নইলে দাদু টিকবানা !
৮ এপ্রিল , ২০২৫
মঙ্গলবার ।
Comentarios