ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান ।। আমিনুল ইসলাম
- আমিনুল ইসলাম
- Jul 28, 2021
- 2 min read
(নজরুল সঙ্গীতের কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী ফিরোজা বেগমের ৯১তম জন্মবার্ষিকীর নিবেদন)

ভাগাড়ের সচ্ছলতায় উচ্ছল নাগরিক ভোরে দিগন্তে হেলান দিয়ে ঝিমোয় রতিক্লান্ত পৃথিবী, উদয়শঙ্করকে হার মানানো আলোকনৃত্যের জন্য সবুজের ঘরে প্রস্তুতি সম্পন্নপ্রায়; তারি মাঝে পৃথিবীর ক্ষুদ্র এক কোণে অকালে ঘুম ভেঙে যাওয়া আমার পূবের বাতায়ন খোলা; সেই বাতায়নে-- ‘আধো ধরণী আলো, আধো আঁধার...’ এই মায়াবী ধুয়োয় বেজে ওঠে দোলপূর্ণিমার সুন্দরবনে উপমিত এক জোছনামাখা কণ্ঠ: ফিরোজা বেগম; তাঁর কণ্ঠে সুসমবেত-- রাতের সমুদ্র, পাতার মর্মর, মেঘের স্বপ্ন, অনিবর্চনীয় এক স্বর্গীয় সুষমায়। দুঃখনিশি ভোর হলো বুঝি! পাশের বাড়ির প্রোষিতভর্তৃকা চোখ তুলে চায়-- কান পাতে পরিযায়ী বাতাসে: আহা, এত ভোরে এ কার এমন গলা! তবে তারও কি ..? শিউলিতলায় ঝরা বেদনায় ঢেউ ওঠে; সুরের সে বাউকুড়ানি বুকলের চূড়া বেয়ে পাড়ি দেয় ধোয়ামোছা আকাশে আর রুপালি দেয়ালের গায়ে লেগে বেদনার দানার মতো ছড়িয়ে পড়ে প্রশান্ত হাওয়ার গায়ে; নাইট ডিউটি শেষে ঘরমুখি পাখামেলা আলোর দূতেরা ভাবে: আহা! কোন্ সে কিন্নরী, স্বর্গের জানালা খুলে সারাবান তহুরায় ভেজা সুর ঢালে পাপেতাপে আকীর্ণ আদমের ধুলির দুনিয়ায়...... এত ভোরে কী তার বেদনা! বিধাতার অনুমতি মেলেছে কি তার? দিনের কোলাহল বগলে নিয়ে দিন ফিরে যায়- আহ্নিকগতির সাজঘরে; ব্যাগভর্তি কালোরঙ নিয়ে হেঁটে আসে সোনাঝরা সাঁঝ; চেপে আসা দিগন্তের দেয়ালে দুচোখ দিয়ে বারান্দায় বসি; আমার সঙ্গোপন মৌনতা ভেঙে দিয়ে আবারও সেই গলা-- সমুদ্রস্বনিত স্বরে বেজে ওঠে ফিরোজা বেগম- ‘ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান আসিবে আজি বন্ধু মোর...’ পায়ের গোড়ায় হা-মুখ আধুনিকতার অলংঘনীয় শেকল, মাথার ওপর ম্যানিলা রোপের মতো উত্তর আধুনিকের নিষেধাজ্ঞা, নাকের ওপর রঙিন সুতোয় নগ্ন মুলোর মোহন পেন্ডুলাম, মধ্য-আশির সমাজন্ত্র হয়ে মাঝপথে বিনাশব্দে ভেঙে পড়ে সব! পরিচিত মাটিকে মাটিতে রেখে স্বপ্নমাখা সুরের পাখায় মন উড়ে যায় সোনারঙ মেঘবালিকার দেশে, রূপকথাময় আলোর বাগানে; ভাবি, রাঙামেঘের বাটিতে পা রাঙিয়ে হিজল বিছানো পথ ধরে এই বুঝি এসে গেলে চুপি চুপি একান্ত বন্ধু আমার! তোমাকে স্বাগত জানাতে ফিরোজার কণ্ঠে কণ্ঠে মেলাই খুঁজে ফিরি- মোড়হীন আকাশের পথ, জোছনার বনতল, রুপালি নদীর পাড়..... কিন্তু না! না ! না! হায় বন্ধু! তুমি যে থাকো কোথায়! আর কোন্ পথেই-বা রাঙা পা তোমার! ‘সুরের খাদ্যে জানো তো মা বাণী নরের মেটে না ক্ষুধা’- জানি, কবিগুরু! কিন্তু শুধু নর নয়, আজ নারীরও সেই একই অবস্থা ; তদুপরি মুক্তবাজার অর্থনীতি কখন যে আমাদের বানিয়ে দিয়েছে- স্টুয়ার্ট মিলের ইকোনোমিক বিয়িং! দিন যায়। সপ্তা যায়! কখনো-বা পেরিয়ে যায় ঘামসিক্ত মাসও! ফোন নেই, চিঠি নেই, মেসেজ নেই; সোনারঙে দু’ঠোঁট রাঙিয়ে সহসায় একদিন আবারও চলে আসে সেই সাঁঝ; আবারও জানালায় উঁকি দেয়- আমেরিকা প্রতিশ্রুত মধ্যপ্রাচ্য শান্তিচুক্তির মতন মধুর ছলনা! তো কে ঠেকাবে তাকে?” মেতে ওঠা নগদের কোলাহলকে পাশ কাটিয়ে, কণ্ঠে নিয়ে সঙ্গোপন পৃথিবীর যাবতীয় অন্তরঙ্গ বেদনা গেয়ে ওঠেন ফিরোজা বেগম, গাই আমিও-- ‘ভরিয়া পরাণ শুনিতেছি গান আসিবে আজি বন্ধু মোর............’ -------------০০০-----------
Comments